২০২২-২০২৩ জাতীয় বাজেট পরবর্তী বিসিএস এর প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন

0
84

বাপ্পী এদবরঃ ১৪ জুন সকাল ১২ ঘটিকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি সংবাদ সম্মেলন করেন। বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি দেশে তথ্য-প্রযুক্তি খাতের বিকাশ ও প্রসার, জনগণের মধ্যে ব্যাপকভাবে সচেতনতার সৃষ্টি, এ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সকল ক্ষেত্রের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণ, তথ্য-প্রযুক্তি সহায়ক ও নির্ভর পরিবেশ সৃষ্টি, দেশে আইটি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্র তৈরি এবং বহির্বিশ্বে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি সৃষ্টির জন্য বহুবিধ কর্মসূচি প্রণয়ন ও কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার যে ধারা সূচিত হয়েছে তা অব্যাহত থাকলে আমরা ২০০১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এরই সাথে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নেও প্রযুক্তিখাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নের সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে যাবে, ২০৪১ সালে সামিল হবে উন্নত বিশ্বের কাতারে। স্বপ্নের সেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতিও সরকারের সাথে একাত্ম হয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনায় প্রস্তুত রয়েছে।

২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের জন্য ঘোষিত বাজেট বিষয়ে আমরা নিম্নরুপ সংশোধনী প্রস্তাবাবলী পেশ করছি। ল্যাপট কম্পিউটার আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার : দেশে স্থানীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে ল্যাপটপ কম্পিউটার আমদানিতে ১৫% মূল্য সংযোজন কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। ল্যাপটপের উপর ১৫% মূল্য সংযোজন কর প্রস্তাবের পাশাপাশি ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে মোট ২৫% মূল্য বাড়বে। এক্ষেত্রে কাস্টমস ডিউটি (সিডি), অ্যাডভান্সড ইনকাম ট্যাক্স (এআইটি), অ্যাডভান্স ট্রেড ভ্যাট যুক্ত হয়ে ল্যাপটপের মূল্য প্রায় ৩১.২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এক্ষেত্রে যে ল্যাপটপটির মূল্য ছিল ১ লাখ টাকা, ১৫% মূল্য সংযোজন কর যুক্ত হয়ে সে ল্যাপটপের মূল্য হবে প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকা।

ল্যাপটপ এখন বিলাসী কোন পণ্য নয়। সরকারের ৫ বিলিয়ন ডলার উপার্জনের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে ফ্রিল্যান্সার থেকে শুরু করে আউসোর্সিং যারা করছেন তাদের প্রধান হাতিয়ার ল্যাপটপ। এছাড়াও শিক্ষা উপকরণ হিসেবেও ল্যাপটপ স্বীকৃত। বাংলাদেশে ল্যাপটপ উৎপাদনের প্রযুক্তি কারখানা এখনো স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। মাত্র ১/২ টি কোম্পানি স্বল্প পরিসরে উৎপাদন শুরু করলেও চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। কেবল মাত্র বাইরে থেকে আনা কম্পোনেন্টস এখানে সংযোজন হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় উৎপাদনকে উৎসাহ দিতে আমদানিতে বাড়তি ট্যাক্স বসালে তা আসলে স্থানীয় উৎপাদনের সহায়তার চাইতে ব্যবহারকারীদের জন্য বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়াবে। এর ফলে ভোক্তাদের একটি বড় অংশ তাদের চাহিদা মোতাবেক ল্যাপটপ না কিনতে পেরে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মিছিলে পিছিয়ে পড়বে।

ল্যাপটপের মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে যে, রিফারবিশড এমনকি লাগেজ পার্টির দৌরাত্ব বৃদ্ধি পাবে। এক্ষেত্রে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে। ল্যাপটপ এখন শিক্ষার্থীদের মৌলিক চাহিদার অংশ। আর দেশীয় প্রযুক্তি উৎপাদন কারখানাকে উৎসাহিত করতে পরিকল্পনা মাফিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাংলাদেশে ল্যাপটপ উৎপাদনে
অনেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করলেও উৎপাদন শুরু করতে আরো কিছু সময়ের প্রয়োজন। একটি পিসি বা ল্যাপটপ তৈরী করতে প্রায় কয়েক হাজার ছোট ছোট কম্পোনেন্টের প্রয়োজন হয়। যদি ল্যাপটপ কম্পিউটার আমরা এদেশে উৎপাদন করতে যাই, সেক্ষেত্রে প্রতিটি কম্পোনেন্ট এখানে উৎপাদন করতে হবে। আবার রোবোটিক প্ল্যান্ট বসিয়ে উৎপাদন করতে গেলে যে পরিমাণ পণ্য উৎপাদন করতে হবে, তা রপ্তানী করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টিতেও আমাদের প্রচেষ্টা চলমান রাখতে হবে। ল্যাপটপের উপর ১৫% মূল্য সংযোজন করকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্তরায় বলে আমরা মনে করি। তাই ল্যাপটপ কম্পিউটারের উপর অতিরিক্ত করভার স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করবে বিবেচনায় নিয়ে এর আমদানিতে ১৫% মূল্য সংযোজন কর থেকে অব্যাহিত প্রদান করা হোক।

প্রিন্টার সামগ্রী আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার ১৫% মূল্য সংযোজন কর আরোপের প্রস্তাবের ফলে আগামী অর্থবছরে প্রিন্টার, কার্টিজ ও টোনারের দাম বাড়বে। এদেশে প্রিন্টার সামগ্রী উৎপাদনে অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ করলেও উৎপাদন শুরু করতে আরো সময়ের প্রয়োজন। তাই ভোক্তাদের স্বার্থ বিবেচনায় ১৫% মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার করার জন্য দাবী জানাচ্ছি।

সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের মূল্য বেড়েছে প্রায় দশ টাকা। বিশ্ব বাজার পরিস্থিতির কারণে ইতোমধ্যেই পণ্যে মূল্য প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই মূল্য সংযোজনের কারণে যদি আরো ১৫ শতাংশ বাড়ে তবে আমাদের দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য। যার সুদুর প্রসারী প্রভাব দেশের অর্থনীতি, উন্নয়ন ও সার্বিক পরিস্থিতির উপর পড়বে। এলসি মার্জিন এবং শিপমেন্ট চার্জ বৃদ্ধির কারণেও অস্থিরতার মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে ১৯৯৮ সালে কম্পিউটার এবং কম্পিউটার পণ্যের উপর কর প্রত্যাহার করায় সকলের নিকট কম্পিউটার সহজলভ্য হয়ে উঠে। কম্পিউটার পণ্য কোন বিলাসিতার পণ্য নয়। দেশের উন্নয়ন করতে হলে দরকার শিক্ষিত সমাজ, আর এই শিক্ষার ক্ষেত্রে কম্পিউটার পণ্য সহজলভ্য রাখার কোন বিকল্প নেই।

আমরা ধারণা করছি ২০২৬ সালের দিকে আমাদের চাহিদা এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা এমন পর্যায়ে আসবে, যখন আমরা স্থানীয় উৎপাদনকে উৎসাহ দিতে এ ধরণের করারোপ প্রস্তাব থেকে লাভবান হতে পারবো। রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের অন্যতম খাত হিসেবে বিবেচিত দেশের আইসিটি খাতকে সুদৃঢ় করতে উল্লিখিত প্রস্তাবগুলি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা সময়ের দাবী। বিসিএস, বেসিস, আইএসবিএবি, বান্ধোব এবং ই-ক্যাবের প্রস্তাবনাগুলো বাজেটে প্রতিফলনের সুব্যবস্থা করার জন্য মাননীয় অর্থমন্ত্রীর প্রতি সনিবন্ধ অনুরোধ জানান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে