রুপসীবাংলা৭১

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ৮৫৭ সালের ভারতবর্ষের ব্রিটিশ বিরোধী প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত এবং জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়, কবি নজরুল কলেজ, সোহরাওয়ার্দি কলেজ, ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজ, সেন্ট গ্রেগোরি স্কুল এণ্ড কলেজ, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, প্রগোজ, মুসলিম, বাংলাবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীসহ পুরান ঢাকার মানুষের অবসর বিনোদন, অক্সিজেন গ্রহণ, প্রাতঃ ও সান্ধ্যভ্রমণের এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের একমাত্র স্থান ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক-এর অভ্যন্তরে রেস্টুরেন্টসহ যেকোন ধরণের বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে গত ০৮/১১/২০২২ ইং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন-এর মাননীয় মেয়র বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের প্রেক্ষিতে গত ০৯ নভেম্বর ২০২২ ইং তারিখে মেয়র মহোদয়ের আমন্ত্রণে আজ ১০ নভেম্বর ২০২২ ইং তারিখ বিকাল ৫ টায় নগর ভবনে বাহাদুর শাহ্ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদ ও জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) ঢাকা মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে মেয়র ব্যারিষ্টার ফজলে নূর তাপসের সাথে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) ঢাকা মহানগর কমিটির সহ-সভাপতি জয়নাল আবদীন, সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্ত ও দপ্তর সম্পাদক আতিকুল ইসলাম টিটু, বাহাদুর শাহ্ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মোঃ আব্দুল মান্নান, সদস্য সচিব আক্তারুজ্জামান খান, যুগ্ম-আহ্বায়ক এডভোকেট সাত্তার, মোঃ মীরুজ্জামান খান মীরু, বাহাদুর শাহ্ পার্ক সান্ধ্য ভ্রমণকারী সমিতির উপদেষ্টা এ কে রিয়াজউদ্দীন, কাজী মোঃ রায়হান জামিল, কামাল আহমেদ  বাহাদুর শাহ্ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য মোঃ শাহ্ আলম ভূঁইয়া, বাহাদুর শাহ্ পার্ক প্রাতঃ ভ্রমণকারী সংঘের অন্যতম সদস্য কাজী খসরু, বাহাদুর শাহ্ পার্ক সান্ধ্য ভ্রমণকারী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ সাঈদ, বাহাদুর শাহ্ পার্ক প্রাতঃ ভ্রমণকারী সংঘের অন্যতম সদস্য এডভোকেট ইলিয়াছ, বাহাদুর শাহ্ পার্ক প্রাতঃভ্রমণকারী সমিতির অন্যতম সদস্য এডভোকেট শরিফুল ইসলাম, এডভোকেট তোফায়েল আহমদ অংশ গ্রহণ করেন। আলোচনা সভায় সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মোঃ আব্দুল মান্নান প্রারম্ভিক বক্তব্যে বলেন বিগত ২৬ বছর যাবত আমি অত্র এলাকার রোগীদের সেবা দিচ্ছি। বাহাদুর শাহ্ পার্ক এ এলাকার জনগণের আবেগ অনুভুতি একটি বিষয়। তারা কোন ভাবেই বাহাদুর শাহ্ পার্কের ঐতিহ্য ক্ষুণ্ন হোক তা মেনে নিবে না।

বাহাদুর শাহ্ পার্ক সান্ধ্য ভ্রমণকারী সমিতির উপদেষ্টা এ কে রিয়াজউদ্দীন বলেন তিনি একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করিছি। পার্কে সংস্কারের নামে নিরাপত্তা বেষ্টনী উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই পার্ক এখন মাদকসেবী ও ভবঘুরেদের অভয়ারন্যে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত পার্কের ভেতর মটর সাইকেল ঘুরাঘুরি করে তাতে শরীরচর্চা ও বিশ্রামরত ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের ব্যাপক ডিস্টার্ব হয়। তাছাড়া শহীদ মিনারে শহীদের রক্তের প্রতিক লাল রং ও ১৮৫৭ সালের বীর শহীদদের স্মরণে লেখাটি মুছে ফেলা হয়েছে। যা স্বাধীনতাপ্রেমী জনগণ কোন ভাবেই মানতে পারছেন না। আরেকজন উপদেষ্টা কামাল আহমেদ বলেন আমার ঢাকার অভিজাত এলাকায় বাড়ি থাকা সত্বেও শুধু পুরান ঢাকাকে ভালবেসে এখানে বসবাস করি। আমরা সরকারকে বিশাল অংকের কর দেই। আমি কোন ব্যবসায়ীক দাবি নিয়ে মেয়র মহোদয়ের নিকট আসিনি এসেছি এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি গুলো বলতে। তা বাস্তবায়ন করার জন্য অনুরোধ করতে। বাহাদুর শাহ্ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য মোঃ শাহ্ আলম ভূঁইয়া বলেন পুরান ঢাকার ফুসফুস খ্যাত বাহাদুর শাহ্ পার্ক। রাস্তা প্রসস্ত করার নামে দিন দিন পার্কটাকে ছোট করে ফেলেছে। এরমধ্যে যদি রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করা হয় তাহলে পরিবেশ ধ্বংস হবে। পুরান ঢাকা মানুষের অক্সিজেন গ্রহণের সুযোগ চীরতরে বন্ধ হয়ে যাবে।

বাহাদুর শাহ্ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব ও  জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান খান বলেন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাহাদুর শাহ্ পার্ক-এর অভ্যন্তরে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের মতো অবিবেচনা প্রসূত, অযৌক্তিক, অপরিনামদর্শী ও গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বন্ধের দাবিতে এবং যে কোন ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের বিরুদ্ধে মাসাধিকালব্যাপী এলাকাবাসীর অব্যাহত প্রতিবাদ সত্ত্বেও কতিপয় স্বার্থপর লোকজন জনমতকে উপেক্ষা করে তাদের খামখেয়ালী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অনড় রয়েছেন¬Ñ যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমরা মনে করি বাহাদুর শাহ্ পার্ক-এর অভ্যন্তরে রেস্তোরাঁর জন্য অবকাঠামো (ওহভৎধংঃৎঁপঃঁৎব) নির্মাণের কোন যৌক্তিকতা নাই। জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) ঢাকা মহানগর কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্ত বলেন বাহাদুর শাহ পার্ক শুধু পার্ক নয়। এটি ১৮৫৭ সালের ভারতবর্ষের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের রক্তে রঞ্জিত এক ঐতিহাসিক স্থান। এর মর্যাদা রক্ষা করা প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিকের একান্ত কর্তব্য। ফুডভ্যান বা রেস্টুরেন্ট অন্যত্র করা যাবে কিন্তু নতুন করে কোন বাহাদুর শাহ্ পার্ক করা সম্ভব নয়। জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) ঢাকা মহানগর কমিটির দপ্তর সম্পাদক আতিকুল ইসলাম টিটু বলেন বাহাদুর শাহ্ পার্কের ইতিহাস এদেশের দেশপ্রেমিক লড়াকু জনগণের অনুপ্রেরণার ইতিহাস। দেশের যুব সমাজকে দেশ প্রেমে উদ্ভুদ্ধ করতে এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস সকলের জানার জন্য পার্কে একস্থানে স্থাপন করতে হবে।মেয়র মহোদয় সকলের বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শুনেন এবং বলেন পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে আমি এবং আমার প্রতিষ্ঠান নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ঢাকাকে বিশে^র কাছে নতুন পরিচয়ে তুলে ধরতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। সিটি কর্পোরেশনের বেদখল হওয়া বিভিন্ন খাল, মাঠ, পার্ক উদ্ধার করে নতুনভাবে সাজাচ্ছি। বাহাদুর শাহ্ পার্ক একটি ঐতিহাসিক স্থান। সংস্কারের নামে ঐতিহাসিক স্থাপনার কোন ধরণের পরিবর্তন আমাদের কাম্য নয়। বাহাদুর শাহ্ পার্কের ঐতিহ্য রক্ষায় ফুড ভ্যান অন্যত্র স্থাপনসহ সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তিনি নেতৃবৃন্দকে আশ^স্ত করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *