রুপসীবাংলা ৭১
নিজস্ব প্রতিনিধিঃরাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারের কামালবাগের দেবী দাস ঘাট এলাকায় একটি চারতলা ভবনে অগ্নিকান্ডে ছয়জন হোটেল শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম- এসএনএফ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। একই সাথে এ ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করে দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করে এ ধরনের ঘটনা বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, গতকাল (১৫ আগস্ট) পুরান ঢাকার চকবাজারের কামালবাগের দেবী দাস ঘাট এলাকায় একটি চারতলা ভবনে দুপুর ১২টার দিকে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের দশটি ইউনিট প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টার চেষ্টায় তা নিয়ন্ত্রণে আনেন। ততক্ষণে ভেতরে আটকা পড়া ছয়জন মারা যান। নিহতদের সবাই ওই ভবনের নিচে একটি রেস্টুরেন্টের (বরিশাল হোটেল) কর্মচারী হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তারা রেস্টুরেন্টের ওপরের পাটাতনে ঘুমিয়ে ছিলেন। অগ্নিকান্ডের পর তারা আর বের হতে পারেননি। সেখানেই তারা পুড়ে মারা যান।
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে আরমানিটোলার ৯/১১ নম্বর আর্মানিয়ান স্ট্রিট হোল্ডিংয়ের হাজী মুসা ম্যানশন নামক ভবনটির নিচতলায় অবস্থিত রাসায়নিক দ্রব্যের দোকান ও গুদামে আগুন লাগার ঘটনায় নিরাপত্তাকর্মী’সহ পাঁচজন নিহত এবং ২২ জন আহত হন। এছাড়া ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীর নবাব কাটরায় রাসায়নিকের গুদামে লাগা আগুনে ১২৪ জন মানুষ পুড়ে অঙ্গার হন। এরপর ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনে রাসায়নিকের গুদামে ভয়াবহ আগুনে প্রাণ হারায় ৭১ জন।
শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম মনে করছে, বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ অনুযায়ী নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও যথাযথ সুরক্ষা, যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা না রাখা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারির অভাবে একের পর এক এ ধরনের অবহেলাজনিত দুর্ঘটনা ঘটছে, যার ফলে বিশেষ করে অসহায়, দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। ফোরাম উপরোক্ত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানাচ্ছে। একই সাথে আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়াসহ নিহত ও আহতদের জন্য আন্তর্জাতিক মানদন্ড (লস অফ ইয়ার আর্নিং) অনুসরণ করে ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের দাবি জানাচ্ছে।
ফোরাম লক্ষ্য করছে যে, যত্রতত্র কারখানা গড়ে তোলা এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারির অভাব বা অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে বারবার এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ইতোপুর্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশসমুহ বাস্তবায়নের আহ্বান জানাচ্ছে শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম।