নিজস্ব প্রতিনিধিঃ পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে বর্জ্য নীতিমালা ১৫ সুপারিশ অর্ন্তভুক্তির দাবিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে) ও তার কনসোর্টিয়াম সদস্য সংস্থা বারসিক, কোয়ালিশন ফর দ্যা আরবান পুওর (কাপ) ও ইনসাইট্স সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। একই সঙ্গে বর্জ্য নীতিমালা-২০২১ বাস্তবায়নে সঠিক গাইড লাইন প্রণয়ন, নোটিশ জারি ও কঠিন বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনার দাবিও জানানো হয়েছে।মুল প্রবন্ধে জানানো হয়, দূষণমুক্ত ঢাকা সিটি এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে ডিএসকে ও তার কনসোর্টিয়াম সদস্য সংস্থা বারসিক, কাপ ও ইনসাইট্স সাথে নিয়ে ইউএসএআইডি সমর্থিত প্রোমোটিং এ্যাডভোকেসি এন্ড রাইটস (পার) কর্মসূচির আওতায় কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনাল এর কারিগরি সহযোগিতায় ‘ঢাকা সিটিজেন্স এ্যাডভোকেসি কোলাবোরেশন এগেইনস্ট পোলিউটিং এনভায়রনমেন্ট (ঢাকা কলিং) প্রকল্পটি গণতান্ত্রিক সুশাসন ও নাগরিক অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটির মিরপুর মোল্লার বস্তি ও কড়াইল বস্তি এবং দক্ষিণ সিটির হাজারীবাগ বৌ-বাজার ও বালুরমাঠ বস্তি মডেল হিসেবে প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ডিএসকে উক্ত কনসোর্টিয়াম প্রকল্পের উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জন্য বস্তিভিত্তিক কার্যক্রম বাস্তবায়নকারী পার্টনার এবং কোয়ালিশন ফর দ্যা আরবান পুওর এ্যডভোকেসি পার্টনার।
আজ রোববার সকালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অডিটোরিয়ামে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এই সুপারিশমালা তুলে ধরেন ওই চার সংগঠনের নেতারা। সভায় মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা কলিং প্রকল্প ও ডিএসকে’র কনসোর্টিয়াম সমন্বয়কারী সানজিদা জাহান আশরাফি। অনুষ্ঠানে কাপের চেয়ারপার্সন এবং ডিএসকে নির্বাহী পরিচালক ড. দিবালোক সিংহের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও গবেষক ড. তারিক বিন ইউসুফ, উত্তর সিটির ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার মো. তাইজুল ইসলাম চৌধুরী, ১৯ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মফিজুর রহমান, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর শিখা চক্রবর্তী, আমেনা বেগম, কাপের নির্বাহী পরিচালক খোন্দকার রেবেকা সান ইয়াত, প্রজেক্ট ম্যানেজার মাহবুল হক প্রমুখ। এসময় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি, সিবিও ও ফেডারেশন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সুপারিশগুলো হল- কঠিন বর্জ্যর সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনকে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-১৯৯৭ এ লাল অথবা কমলা-থ শ্রেণিভুক্ত ও বর্জ্য সংগ্রহ-পরিবহন কার্যক্রম লাল অথবা কমলা শ্রেণিভুক্ত এবং বাধ্যতামূলকভাবে পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণ করা; বিধিমালা-১৯৯৭ এর আওতায় গন্ধ পরিমাপের মানমাত্রা নির্ধারণ; পরিবহন বর্জ্য পৃথকীকরণ এবং পরিবহনের জন্য সুনির্দিষ্ট স্থান ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, পরিচ্ছন্ন কর্মীদের পেশাগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত ও স্বাস্থ্য বীমা বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা; পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের টয়লেট এবং পানি সরবরাহের বিষয়টি সম্পৃক্ত; শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা এবং তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা; প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সিটি কর্পোরেশনের বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা ও কঠিন বর্জ্যর জন্য বরাদ্দ বাড়ানো; বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটিতে শহরের প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা; কঠিন বর্জ্য হ্রাস করার দিকে জোর দেয়া এবং বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরকরণে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কাজ করার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা; কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আচরণগত পরিবর্তন আনয়নে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ইতিবাচক উদাহরণ সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করা; সড়কের পাশে এবং জলাশয়ে বর্জ্য ফেলা রোধে কঠোর নজরদারী নিশ্চিত; প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীদের জন্য ময়লার বিল কমানো ও সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে বিনামূলে ময়লা ফেলার অনুমোদন দেয়া; বর্জ্য সংগ্রহের সময়, প্রয়োজনীয় জনবল, প্রাসঙ্গিক অন্যান্য অবকাঠামোর বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান; নিয়োজিত ঠিকাদারদের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা ও কার্যক্রম সম্পকে নগরবাসীর অভিযোগ ন্যূনতম কোটায় নামিয়ে আনা এবং নিষ্পত্তি করা; জনস্বার্থে রাতের বেলায় বর্জ্য সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট ভাগাড়ে নিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করা।
উল্লেখিত সুপারিশসমূহ বিবেচনায় নিয়ে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা- ২০২১ বাস্তবায়নে গাইড লাইন প্রণয়ন ও সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন পরিচালনা সম্পর্কিত প্রজ্ঞাপন জারি, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নগরের সকল স্তরের অংশীজনের অংশগ্রহণে উৎস থেকে বিভাজন, মৌল নীতি অনুসরণ এবং বিধি বাস্তবায়নে নজরদারী ও পরিবীক্ষণ বৃদ্ধির আহবান জানান বক্তরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, বর্জ্য এখন আর বজ্য নয়, এটা মহামূল্যবান সম্পদ। বড় ব্যবসার ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। আমরা যত উন্নত হচ্ছি ততই বর্জ্যর পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকা শহরে প্রতি বর্গ কিলোমিটার ৪৯ হাজার মানুষ বসবাস করে। এটি আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তারপরও উত্তরের মেয়র মহোদয়ের নেতৃত্ব আধুনিক মানের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নান্দনিক সৌর্দায্য উপহার দিয়েছি। আমরা ইতিমধ্যে এশিয়ার চমৎকার সিটি হলো ভারতের ইন্দোর। তাদের সাথে মানেজমেন্ট বিষয়ে বৈঠক করেছি। বর্জ্যর ৬ লেভেলের পৃথককরণ তারা। কিন্তু আমাদের দেশের জন্য তা কঠিন চ্যালেঞ্জ। তারপর আমরা একটি নীতিমালা তৈরি করেছি।তিনি বলেন, এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে যাচ্ছে। প্রতিদিন সেখান থেকে ৩হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ও চায়না সিএসসি কোম্পানির সাথে ত্রিপাক্ষীক চুক্তি হয়েছে। প্রতিদিন ২৫০০ থেকে ২৭০০ টন বর্জ্য উৎপাদন করি। প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ টন বর্জ্যে ঘাটতি আছি। তারপর চুক্তি করেছে। আগামীতে আমরা সরাসরি বাসা থেকে ইনটেক ১০০ শতাংশ বর্জ্য সংগ্রহ করতে হতে পালে। তাই সক্ষমতার সাথে গতি বাড়াতে হবে।
মতবিনিময় সভায় বক্তরা বলেন, বর্জ্যকে সম্পদ হিসেবে দেখলেই সব সমস্যার সমাধান হবে। পচনশীল ও কঠিন বজ্য শুরু থেকে আলাদা করতে হবে। কারন শুরু থেকে আলাদা করতে পারলে সময়ের পাশাপাশি রি-সাইকিলিং খরচও কম হবে। পচনশীল বর্জ্য থেকে সার ও বিদুৎ উংপাদন করা যাবে। তাই আমাদের সঠিক কর্মপরিকল্পনা নেয়া দরকার।