নিজস্ব প্রতিনিধি:-আমরা কোন দেশে বসবাস করছি। এদেশে রোজার মাসেও কাউকে ছাড় দেয়া হয় না। যেমন বাজারের উর্ধ্বগতি, অফিস আদালতে দুর্নীতি। কোথাও স্বস্থি নেই, নিরাপত্তা নেই, মানবতা নেই, সবাই যেন এক অদ্বুধ ঘোড়ার পিঠে উল্টা দিকে দৌরাচ্ছে। এখান থেকে মুক্তি চাই। কিন্তু পদ্ধতি জানি না। এরই মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল ২০২২, দিবাগত রাত ২:৩০ মিনিটে ঢাকার কাফরুল থানাধীন ১১৭৪ পূর্ব শেওড়াপাড়া মাদবরের পুকুরপাড় ঢাকা এ/পি-বাসা নং-১১৪৯, নেহাল মঞ্জিল থেকে বিশিষ্ট গাড়ী ব্যবসায়ী মোঃ মহাসিন (৪৪), পিতা: কয়ছর আহাম্মদ গাজী, মাতা: শাহানূর বেগম, স্ত্রী: ফরিদা ইয়াছমিন কে তার স্ত্রীর উপস্থিতিতে ৭-৮ জন লোক নিজেদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যান। পরবর্তীতে কাফরুল থানায় যোগাযোগ করলে সেখানে মহাসিন নামে কাউকে আনার খবর অস্বীকার করে। তখন মহাসিনের স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন, পিতাধ মোঃ আব্দুর রশিদ, মাতা: খুরশিদা বেগম, কাফরুল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ডায়েরি নং-১৫৬৫, তারিখ: ২৫/০৪/২০২২। এর পরেও বিভিন্ন যায়গায় খোঁজ খবর নেওয়ার পরও তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। মহাসিন জীবনযুদ্ধে সংগ্রামী একজন মানুষ। বাবার বড় সন্তান হিসেবে ছোট ৪ ভাই ও দুই বোনের পাশে দাড়াতে হয়েছে। এছাড়াও অনেক কষ্ট করে তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডে দুটি ট্রাক নিয়ে ব্যবসা বানিজ্য করে আসছে। তার স্থানীয় সাং- ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর।
কত অসহায় একটি পরিবার। মহাসিন ছাড়া তাদের উপার্জনের আর কেউ নেই। অথচ পবিত্র রোজার মাসে কি নিষ্ঠুর ও নির্মম হলে তারা মহাসিনকে তুলে নিয়ে নিখোঁজ করে ফেললো। মহাসিন যদি কোন অপরাধ করে থাকে প্রচলিত আইনে সব অপরাধের শাস্তি রয়েছে। তার সেই অপরাধের কথা প্রকাশ করে যে কোন থানার তাকে সপর্দ করতে পারতো। কিন্তু কেন তারা মহাসিনের মতো একজন সাধারণ ব্যবসায়ীকে গুম করে নিলো তা আমাদের বোধগম্য নয়। এই ঘটনাকে সামনে রেখে মনে পড়ে যাচ্ছে, ২০১৩ সালে ৪ ডিসেম্বর তেজগাঁও’র সাজেদুল ইসলাম সুমনসহ যে ৮জনকে গুম করেছিল তাদের মধ্যে কাউছার নামে একজন ড্রাইভার ছিলো। সেদিন কাউছারকে কেন তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আজও কেউ বলতে পারে না। রাজনৈতিক কারণে কিংবা ব্যবসায়িক কারণে অনেক অনেক ব্যক্তিবর্গকে গুম করে নেয়া হয়েছে। কিন্তু অতি সাধারণ মানুষের নাম এই তালিকায় কেন থাকবে? ঈদের আগে মহাসিনের পরিবার মহাসিনকে ছাড়া অসহায়। তারা চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে। কি করবে এখনও বুঝতে পারছে না। দিশেহারা হয়ে গতকাল ২৮ এপ্রিল ২০২২ প্রেসক্লাবে এসেছিল। সেখানে প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করার জন্য হল বুকিং দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। প্রেস ক্লাব মানুষের অধিকার প্রকাশ করার একটি ঐতিহাসিক স্থান। সেই স্থানটিও সাধারণ মানুষ তার অধিকার প্রকাশ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। হল বুকিং দিতে গিয়ে মহাসিনের পরিবার ও মায়ের ডাক ব্যর্থ হয়েছে। কার ইশারায় প্রেসকøাবের হল বুকিং থেকে আমরা বঞ্চিত হলাম সেটাও আজ জানতে চাই। ঈদের পূর্বে যারা গুম হয়েছে মহাসিনসহ সকলকে তাদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। র্যাব-পুলিশের বিরুদ্ধে বিদেশীরা যদি কোন অভিযোগ করে সেই অভিযোগ খন্ডানোর দায়িত্ব তাদের। আমরা আমাদের স্বজনদের ফিরে পেতে চাই। গুম-খুন, ক্রস ফায়ার কোন সভ্য ও গণতান্ত্রিক সমাজের নিদর্শন হতে পারে না। আমরা যদি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই থাকি তাহলে কারা বার বার এই গুম, খুন করছে? তাদের পরিচয় রাষ্ট্রের কাছে জানতে চাই। প্রধানমন্ত্রী আপনি গুম হওয়া সকল সদস্যদের কে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিন। আর যদি ব্যর্থতার পরিচয় দেন দয়া করে পথ ছেড়ে পদত্যাগ করুন। যারা গুমের শিকার তাদেরকে যারা ফিরিয়ে দিতে পারবে আমরা সেরকম গণতন্ত্রের বান্ধব একটি সরকার চাই। আজ মহাসিনের বৃদ্ধ পিতা কয়ছর আহাম্মদ গাজী, মহাসিনের স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন ও ভাই বাবুল গাজী যখন প্রেস ক্লাবে আমাকে তাদের অসহায়ত্বের কথা বলছিল তখন কোন উত্তর দিতে পারিনি। তাদের চেহারার মধ্যে একটি নিষ্পাপ প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছিলাম। ভাবছিলাম এমন একটি অসহায় পরিবারের শেষ ভরসা বড় সন্তান মহাসিনকে কে বা কারা কেনই বা গুম করলো। মহাসিন তো রাষ্ট্রের জন্য হুমকি নয়। সে অতি সাধারণ একজন ব্যবসায়ি। ব্যবসা করে জীবন-জীবিকা পরিচালিত করতো। এরকম অজস্র মহাসিনরা এখন গুম হয়ে অন্ধকারে রয়েছে। তাদের সন্তানদের ঈদ এলেও কোন আনন্দ আসে না। কবে আনন্দ করেছে তারা তা জানে না। তাদের জীবনে আনন্দটাও গুম হয়েগেছে। যখন সবাই ঈদের কেনা-কাটা করে তখন মায়ের দিক তাকিয়ে শিশু সন্তানরা প্রশ্ন ছুড়ে দেয়? মা, বাবা কবে আসবে? সেই উত্তর মায়ের কাছে থাকে না। নিরবে চোখের জল ফেলতে ফেলতে সন্তানকে শান্তনা দেয়। এভাবে গুমের কথা আর কত লিখব আর বলবো। এসব লিখতে আর ভালো লাগে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি তো মানবতার মা, নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের প্রতি আপনি সদয় হন। গুম হওয়া সব সন্তানদেরকে তাদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিন। এটিই হবে তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ ঈদ।