রানা প্লাজা দূর্ঘটনার নয় বছর স্মরণে শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের মতবিনিময় সভাকর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় হতাহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে মানদন্ড প্রণয়নের আহ্বান

0
78

নিজস্ব প্রতিনিধি:শ্রম আইন সংশোধন করে আইএলও কনভেনশন ১০২ এবং ১২১ অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় হতাহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে মানদন্ড প্রণয়নেন আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা। আজ ২৬ এপ্রিল ২০২২ (মঙ্গলবার) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার নয় বছর স্মরণে শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম (এসএনএফ) এর উদ্যোগে “রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ৯ বছর: শ্রমিকের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি নিশ্চিতে করণীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান।রানা প্লাজার মত দুর্ঘটনা আর যেন না ঘটে তার জন্য কর্মস্থল নিরাপদ করতে হবে উল্লেখ করে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শামসুন্নাহার ভূইয়া, এমপি বলেন, কর্মস্থল নিরাপদ হলে শ্রমিকরা যেমন নিরাপদ তেমনি মালিকরাও নিরাপদ। তাই কর্মস্থলের নিরাপত্তা মালিকদেরই নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে শ্রমিকদেরও সচেতন হতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের অধিকারের কথা তুলে ধরতে হবে। তিনি আরো বলেন, শ্রম আইনের কোন কোন জায়গায় সংশোধন দরকার তা শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে তুলে ধরতে হবে। এসময় তিনি রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় কতজন শ্রমিক চিকিৎসা বঞ্চিত তাদের একটা ডাটাবেস তৈরি করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

সভাপতির বক্তব্যে বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী ও শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের আহ্বায়ক ড. হামিদা হোসেন বলেন, শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে একটি মানদন্ড থাকা প্রয়োজন। যাতে হতাহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে না হয়। তিনি বলেন, যারা দায়িত্বে রয়েছেন তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। সেইফটি কমিটির সদস্যদের আরো বেশি সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।বিলস্ যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, ক্ষতিপূরণের সমাধান টাকার অঙ্কে হতে পারে না। এর জন্য আইএলও কনভেশন ১০২ এবং ১২১ কে মানদন্ড ধরে শ্রমিকের আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করতে হবে। শ্রম আইনে শ্রমিকদের নূন্যতম যেটুকু অধিকার রয়েছে তারা তা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অধিকার আদায়ে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।বর্তমান বাস্তবতায় দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের পরিমান সামঞ্জস্য নয় উল্লেখ করে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, আইএলও’র মানদন্ড অনুযায়ী শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের পরিমান নির্ধারণ করতে হবে। এক্ষেত্রে শ্রম আইনের সংশোধনীতে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করতে হবে। এসময় তিনি এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম চালু করার আহ্বান জানান।

শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) নেতা কামরূল আহসান বলেন, কলকারখানাগুলো যারা গড়েন তাদের বিধি বিধানগুলো না মানার কারনেই কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় শ্রমিকরা হতাহত হচ্ছে।সভায় শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরায় শ্রমিকরা। কিন্তু মর্যাদার জায়গায় তারা বঞ্চিত। তিনি বলেন, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচ্যুইটি, মাতৃত্বকালীন ভাতা, ওভারটাইম সবই মজুরির সাথে সম্পৃক্ত কিন্তু ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে আয়ের কোন সম্পৃক্ততা নেই। তাই ক্ষতিপূরণের মানদন্ড ঠিক করে সে অনুযায়ী শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত।সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, শ্রম আদালতে একটি মামলা শেষ হতে অনেক সময় অতিবাহিত হয়। অনেক সময় ৮/১০ বছরেও শেষ হয় না। যাতে স্বল্প সময়ে শ্রম আদালতের মামলা নিষ্পত্তি করা যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তিতে শ্রমিকদের হয়রানি কমবে না। তারা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কার্যক্রম আরো জোরদার করার আহ্বান জানান।  বক্তারা শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টিতে জোর দিয়ে এবং সেইফটি বিধিমালাঅনুযায়ী কারখানার ভবন নির্মাণ করা, শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় অন্তর্ভুক্তির  দাবি জানান।

ব্লাস্টের উপ-পরিচালক (আইন) এডভোকেট মোঃ বরকত আলীর সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত শ্রম উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান, কর্মজীবী নারীর নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া রফিক বেবী, বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম আশরাফউদ্দিন, আওয়াজ ফাউন্ডেশনের সভাপতি মমতাজ বেগম, বিলস্ পরিচালক নাজমা ইয়াসমীন প্রমুখ।উল্লেখ্য, শ্রমবান্ধব নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করা এবং কর্মক্ষেত্রের দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও আহত শ্রমিকদের উপযুক্ত চিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনসহ ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি ও তাদের সহায়তাকল্পে জাতীয় পর্যায়ের মানবাধিকার সংগঠন, জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন, শ্রমিক অধিকার ও পরিবেশ নিয়ে কর্মরত সংগঠনসমূহের সমন্বয়ে ‘শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম-এসএনএফ’ গঠিত। সবার জন্য নিরাপদ কাজ এই লক্ষ্য নিয়ে ‘শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম’ সরকার, নীতি নির্ধারক ও কারখানার মালিকদের সংগঠন/সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে অ্যাডভোকেসি, জনমত গঠন এবং বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সহায়তা প্রদানে কাজ করছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে