হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে গুজব, হুজুগ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে জাগরণ সৃষ্টিতে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

0
73

ডেক্স রিপোর্টঃ হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে ‘গুজব হুজুগ সন্ত্রাস নয়, উন্নয়ন হোক দেশময়’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গুজব, হুজুগ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে জাগরণ সৃষ্টিতে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৪ মার্চ, ২০২২ তারিখ রোজ সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন চৌধুরী হলে সকাল ১১.০০ ঘটকিায় এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, কলামিস্ট ও গণমাধ্যম কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।হেযবুত তওহীদের ঢাকা বিভাগীয় আমির ডা. মাহবুব আলম মাহফুজের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান মো. বাবুল সরদার চাখারী, ঢাকা বিভাগ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি ইকবাল হাসান কাজল, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব স্বনামধন্য যন্ত্রশিল্পী এনামুল কবির, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুন সরকার রানা, দৈনিক আজকের বার্তার সম্পাদক ও বরিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী নাসিরুদ্দিন বাবুল, হেযবুত তওহীদের নারী বিভাগের প্রধান এবং শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বর্তমান সময়ে নেতিবাচক গুজব আমাদের সমাজে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এর ফলে মানুষ, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। ধর্মান্ধতা, অন্যায়, শোষণ ও জুলুমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছর পরও আমরা গুজব ও হুজুগের তান্ডব দেখতে পাচ্ছি। বিগত দিনে আমরা বারবার গুজব রটিয়ে হামলা, হত্যা, অগ্নিসন্ত্রাসের তান্ডবলীলা দেখেছি। কোরআন অবমাননা, রসুলকে অসম্মান করা ইত্যাদি নানা প্রকার গুজব ফেবসুকে ছড়িয়ে দিয়ে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের শত শত বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এসব প্রতিরোধে এখনই সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মানুষের মধ্যে সুস্থ চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। যাতে ধর্মব্যবসায়ী যেসব শ্রেণি গুজব ছড়ায়, তারা তাদের প্রভাবিত করতে না পারে।
তেমনই এক গুজবের ফলে ৭ বছর আগে নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে সৃষ্টি হয় এক ধ্বংসযজ্ঞ। ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ নোয়াখালীতে গুজব রটিয়ে, মসজিদকে গীর্জা নির্মাণ আখ্যা দিয়ে হেযবুত তওহীদের দুই সদস্যকে হত্যার বিবরণ তুলে ধরে প্রধান অতিথি বলেন, সেদিন নির্মাণাধীন মসজিদকে গির্জা বলে গুজব রটিয়ে দিয়ে, মিথ্যা হ্যান্ডবিল বিলি করে ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণি ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে তারা হামলা চালায়। দুজন সদস্যকে প্রচÐ প্রহারের পর তাদের হাত পায়ের রগ কেটে দেয়। তাদের চোখ উপড়ে নেয়। তারপর গরু জবাই করা ছুরি দিয়ে জবাই করা হয়। পেট্রোল ঢেলে তাদের দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার আগে থেকেই সেই স্থানীয় স্বার্থান্বেষী কুচক্রী মহল ও ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণির ষড়যন্ত্র সম্পর্কে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছিল। আমরা মনে করি, কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে উদ্যোগ নিলে এই মর্মান্তিক নজিরবিহীন এ ঘটনাটি ঘটত না। এই ঘটনার প্রায় আড়াই বছর পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে এই মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়। বহু আসামী আইনের আওতায় আসেনি, যারা এসেছে তারা রাজনৈতিক হয়রানীর ধুয়া তুলে সহজেই জামিনে বেরিয়ে এসে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি, তারা আবারও হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, মিথ্যাচার চালাচ্ছে ও হামলার উসকানি দেওয়া আরম্ভ করেছে। বিশেষ করে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে বিরাজমান শান্তিময় পরিস্থিতিকে অশান্ত করে তোলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এই অপপ্রচারকারী ও হামলার চক্রান্তকারী কুচক্রী মহলকে দ্রæত আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখী করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। এদের বিরুদ্ধে এখনই আইনী শক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এরা যে কোনো ধরনের তাÐব সৃষ্টি করতে পারে। সেক্ষেত্রে কেবল হেযবুত তওহীদই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সমাজ, ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশ।
বিশেষ অতিথি হেযবুত তওহীদের নারী বিভাগে প্রধান এবং শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী বলেন, সোনাইমুড়ীতে যেখানে গুজব-সন্ত্রাসীরা তান্ডবলীলা চালিয়েছিল, সেই ধ্বংসস্তুপের উপরেই বর্তমানে আমরা নির্মাণ করেছি ‘চাষীরহাট উন্নয়ন প্রকল্প’। সেই মসজিদটি এখন পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় হচ্ছে। আমরা হতোদ্যম হইনি, নিরাশ হইনি। আমরা মনে করি আমরা যদি সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকতে পারি, সমাজের কল্যাণমুখী কার্যক্রম চালিয়ে যাই, তাহলে শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ আমাদের সঙ্গে থাকবেন। কাজেই দেশজুড়ে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের মালিকানাধীন ভ‚মি, পুঁজি ও মেধাকে একত্রিত করে আমরা বহু উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছি।
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুন সরকার রানা বলেন, ১৯৭১ সালে ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে আমাদের দেশের মা-বোনদের কাফের ফতোয়া দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। সেই থেকে আজও বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার চর্চা বেড়ে গেছে। যারা সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি করে তারাই ইসলামের বড় শত্রæ। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের দ্রæত বিচারের আওতায় এনে ফাসির রায় কার্যকর করা হোক।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে সেেিনর স্মৃতিচারণ করেন শহীদ সোলায়মান খোকনের বোন ইয়াসমিন ইলা। এসময় অনুষ্ঠানস্থলে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন দৈনিক অন্য দিগন্তের সম্পাদক মোহাম্মদ মাসুদ, প্রচার সম্পাদক শফিকুল আলম উখবাহ, গণমাধ্যম সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা, সাহিত্য সম্পাদক রিয়াদুল হাসান প্রমুখ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে