নিজস্ব প্রতিনিধি:১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ রবিবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ভাষাশহীদ ও ভাষাযোদ্ধাদের স্মরণে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মেকাররমে যোহরের নামাজ শেষে দোয়া-মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।  দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন,সাবেক সচিব সিরাজ উদ্দীন আহমেদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগের সভাপতি এম এ জলিল, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির সদস্য জননেতা বেলাল নূরী বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুফতী মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ী, কার্যকরী সভাপতি মাওলানা আনোয়ার শাহ, সিনিয়র সহসভাপতি মুফতী আল্লামা খলিলুর রহমান জিহাদী, সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা মোঃ আনোয়ার হোসাইন জুয়েল, মুফতী আব্দুল আলিম বিজয়নগরী, হাফেজ মাওলানা শামসুল আলম জাহাঙ্গীর নূরানী হুজুর, হাফেজ মাওলানা সাঈফুল ইসলাম, মাওলানা মোঃ আব্দুল মুবিন আখন্দ, হাফেজ মাওলানা মাহবুবুর রহনান, নাফি উদ্দিন উদয়, শাফি উদ্দিন বিনয় প্রমুখ।

দোয়া-মাহফিল পূর্ব নেতৃবৃন্দ বলেন,ভাষাশহীদ ও ভাষাযোদ্ধারা আমাদের অন্তহীন প্রেরণার উৎস। মাতৃভাষার দাবিতে বাঙালি তরুণদের সেদিনের আত্মদান শুধু ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, ক্রমেই একটি গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্ন ও অঙ্গীকার দানা বেঁধেছিল। সে স্বপ্নই স্বাধীনতাসংগ্রাম, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধসহ ইতিহাসের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে আমাদের পথ দেখিয়েছে। তাই ফেব্রুয়ারি স্বাধীনতা, মুক্তি, সাম্য, গণতন্ত্র—আধুনিক বাঙালির সব শুভ চেতনার মাস। আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারির আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃত। দিবসটি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসও বটে। মাতৃভাষা বাংলার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগের মহিমা ছড়িয়ে পড়েছে ভৌগোলিক সীমারেখা অতিক্রম করে পৃথিবীর পরিমণ্ডলে। বিশ্বের প্রতিটি জনগোষ্ঠীর নিজ নিজ মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও বিকাশের বিষয়টি তাদের রাজনৈতিক অধিকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত।নেতারা আরো বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে আমরা নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকি। ঢাকায় বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলাকে কেন্দ্র করে মাসব্যাপী উৎসবের আবহ লক্ষণীয়। বই মেলার পরিসরও বাড়িয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হয়েছে, যা প্রকাশক ও পাঠকদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন শহরেও একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা ভাষাশহীদদের স্মরণ করে যাচ্ছি। কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের মূল যে লক্ষ্য সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রবর্তন, তা আজও পূরণ হয়নি। সরকারি কাজকর্মে বাংলা চালু থাকলেও ব্যবসা-বাণিজ্য, উচ্চশিক্ষা, গবেষণাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ইংরেজির প্রাধান্য লক্ষণীয়। বাংলায় আইন প্রণীত হলেও উচ্চ আদালতে এখনো বাংলা চালু হয়নি। শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের একাংশ মাতৃভাষা বাংলার পরিবর্তে ইংরেজি রপ্ত করতেই বেশি আগ্রহী। শিশুদের শিক্ষাক্ষেত্রে ইংরেজি মাধ্যমের প্রসার ঘটে চলেছে, সাধারণ বিদ্যালয়েও বাংলা অবহেলিত। মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থায়েও বাংলা ভাষার চর্চা গৌণ।নেতৃবৃন্দ বক্তব্যে আরো বলেন, মাতৃভাষাযোদ্ধাদের একসাগর রক্তের মধ্য দিয়ে অর্জিত অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আমরা কি তোমাদের ভুলিতে পারি। প্রাণপ্রিয় মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার আন্দোলনে পাকি স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশের গুলিতে সেইদিন শহীদ হন সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত, অলিউল্লাহ ও শফিক প্রমুখ। পরিতাপের বিষয় হলো আজ বিদেশী ভাষার আগ্রাসনে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা হচ্ছেনা। তাই সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর জন্য মহান ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে সামাজিক আন্দোলনে রূপান্তরিত করতে হবে। আর তা করতে পারলেই সর্বক্ষেত্রে বাংলাভাষার ব্যবহার সুনিশ্চিত করা যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন ঘটলেই কেবল তার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা সম্ভব। শিক্ষাসহ জীবনের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করার ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। প্রথমে প্রয়োজন একটি জাতীয় ভাষাপরিকল্পনা। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন কিছু স্থায়ী প্রতিষ্ঠান ও মানুষ, যাঁরা বাংলা ভাষার বিকাশের লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করে যাবেন।একুশের চেতনা শুধু এক দিনের বা মাসের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না, এর যে সার-সত্য, সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন, মাতৃভাষার উন্নয়ন ও বিকাশে নিয়ত প্রত্যেক নাগরিককে নিবেদিত থাকতে হবে; সেটাই হবে ভাষাশহীদদের প্রতি আমাদের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন।তারা আরো বলেন, আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য-অগনিত দান আর নিয়ামতে পরিপূর্ণ আমাদের মানব জীবন-সংসার। ভাষাও আল্লাহ সোবহানাহু তা’য়ালার অনন্য একটি মহা-দান এবং নিয়ামত। ভাষা মানুষের অতি-প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যা ছাড়া জীবনকে কল্পনাও করা যায় না। ইসলামেও ভাষা শিক্ষা , ভাষার ব্যবহার ও মাতৃভাষায় ইসলাম চর্চা করার বেশ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। আল্লাহ তা’য়ালা মানব জাতিকে যত নিয়ামত দিয়েছেন তার মধ্যে ভাষা হচ্ছে অন্যতম। মানুষ ভাষার মাধ্যমে অন্যের সাথে ভাব বিনিময় করতে পারে। মনের মণিকোঠায় লুকানো সুখানুভূতি দু:খানুভূতি নিমিষেই প্রকাশ করতে পারে অন্যের কাছে।তিনি মানুষকে বাকশক্তি দিয়েছেন, যা অন্য কোন প্রাণীকে দেওয়া হয়নি। পশু-প্রাণীরা কখনো তাদের মনের বেদনা কারো কাছে বলতে পারেনা; আনন্দ উল্লাসও অন্যের সাথে ভাগাভাগি করতে পারে না। কিন্তু শ্রেষ্ঠ জাতি মানুষ তাদের সব অনুভুতি অন্যের সাথে আদান প্রদান করতে পারে। এছাড়াও আল্লাহ তা’য়ালার অসংখ্য নিদর্শন আমাদেরকে পরিবেষ্টন করে আছে। এইসব নিদর্শনগুলোর মধ্য থেকে কথা বলা বা ভাষার নিদর্শনটিই আমরা অনুভব করি এবং ব্যবহার করি।দোয়ায় জাতীয় মসজিদের ইমাম মুফতী হাফেজ মাওলানা মুহিব উল্লাহ হিল বাকী ভাষাশহীদ ও ভাষাযোদ্ধাদের রুহের মাগফিরাত কামনাসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ আগষ্ট যারা শাহাদাৎ বরণ করেছেন তাদের এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও জাতীয় চার নেতার বিশপষভাবে রুহের মাগফিরা কামনা করা হয়। এছাড়াও মুনাজাতে বিশ্ব মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও নিরাপ জীবন কামনার পাশাপাশি করোনা ভাইরাস ও ওমিকন থেকে বিশ্ববাসীর মুক্তি চাওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *