পেট্রোলপাম্প মালিক সমিতির সংবাদ সম্মেলন-দাবী পুরণ না হলে ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য তেল উত্তোলন বন্ধ
ঢাকা ২ ফেব্রুয়ারি : দাবি-দাওয়া বাস্তবায়ন ও জ্বালানী তেলের বিμয় কমিশন বৃদ্ধি করা না হলে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারী- বৃস্পতিবার থেকে সারাদেশের সকল ডিপো থেকে জ্বালানী তেল উত্তোলন বন্ধ থাকবে।
আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স ডিষ্টিবিউটর্স এজেন্স এন্ড পেট্রোলপাম্প ওনার্স এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মিজানুর রহমান রতন। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আমরা দাবী দাওয়া বাস্তবায়নে হরতাল ধর্মঘটে কখনই যেতে চাইনি। আমরা আলাপ আলোচনা ও বৈঠকের মাধ্যমে সকল সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছি। গত ৩ বছর ধরে দাবী-দাওয়া নিয়ে বহু পত্র দিয়েছি ও আলোচনা করেছি, বৈঠক করেছি। অথচ বৈঠক হচ্ছে ঠিকই কিন্তু দাবী বাস্তবায়ন করা হয় নি। পরবর্তীতে শেষ পর্যন্ত এসোসিয়েশনের মতামতকে উপেক্ষা করে একক সিদ্ধান্তে সরকার জ্বালানী তেল ডিজেলের ০.২০ পয়সা বিμয় কমিশন ধার্য্য করে। যা জ্বালানী তেল ব্যবসায়ীদের আশাহত করেছে। দাবীসমূহ হচ্ছে- ১। জ্বালানী তেল বিμয়ের প্রচলিত কমিশন কমপক্ষে ৭.৫% করতে হবে। ২। জ্বালানী তেল ব্যবসায়ীরা কমিশন এজেন্ট যা গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে। ৩। সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক পেট্রোল পাম্পের প্রবেশ দ্বারের ভূমির জন্য ইজারা গ্রহণের প্রথা বাতিল করতে হবে কারণ প্রবেশদ্বার ব্যবহারকারীরা অর্থ্যাৎ সকল যানবাহন সরকারের নিয়ম মাফিক কর প্রদান করেন। ৪। ট্রেড লাইসেন্স ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ব্যতিত অন্য দপ্তর বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক লাইসেন্স গ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। ৫। মালিক কর্তৃক প্রিমিয়াম পরিশোধ সাপেক্ষে ট্যাংকলরী শ্রমিকদের ৫লক্ষ টাকা দূর্ঘটনা বীমা প্রথা চালু করার জন্য বীমা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করতে হবে। ৬। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সকল জ্বালানী ডিপো সংলগ্ন ট্যাংকলরী শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত শে.চাগার ও বিশ্রামাগার নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় জ্বালানী মন্ত্রণালয় ও বিপিসি কর্তৃপক্ষ একক সিদ্ধান্তে বিবেচনাহীনভাবে জ্বালানী তেল বিμয়ের উপর লিটার প্রতি মাত্র .২০ পয়সা বৃদ্ধি করেছে। যেখানে আমরা জ্বালানী তেলের মুল্য বৃদ্ধির অনেক আগে থেকেই বিদ্যুতের মুল্য বৃদ্ধি, সরকারী বিভিন্ন সংস্থার লাইসেন্স ফি বৃদ্ধি, সর্বোপরি উর্দ্ধমূল্যের বাজারে কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধিতে জ্বালানী তেল বিμয়ের উপর কমিশন ১.৬০ টাকা বৃদ্ধি করার জন্য দাবী করে আসছি। সেখানে সরকার গত ৪/১১/২০২১ ডিজেলের মূল্য এযাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৫ টাকা বৃদ্ধি করলেও জ্বালানী তেল ব্যবসায়ীদের জন্য কোনরুপ কমিশন বৃদ্ধি করেননি। গত ০৬.০১.২০২২ ইং তারিখ বিপিসির ডাকা মিটিংয়ে আমাদেরকে একটি সম্মানজনক কমিশনের আশ্বাস প্রদান করেছিলেন। কিন্তু কার্যত দুঃখজনক ভাবে বিপিসি ও জ্বালানী মন্ত্রণালয় জ্বালানী তেল ব্যবসায়ীদের প্রতি চরম উদাসীনতা দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, জ্বালানী তেল বিμয়ে তাদের লোকসান ঠেকাতে লিটার প্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধি করেছে। অথচ যাদের মাধ্যমে এই পুরো তেল বিμয় কার্যμম পরিচালিত হচ্ছে তাদের ব্যবসার প্রতি বিন্দুমাত্র সুবিচার করা হয়নি। ফলে সকল জ্বালানী তেল ব্যবসায়ীগণ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করেন। বাংলাদেশের অধিকাংশ পেট্রোল পাম্পই প্রতিদিন গড়ে ২০০০ লিটারের নিচে ডিজেল বিμি করে থাকে। ফলে .২০ পয়সা দিয়ে গড়ে তাদের মাসিক ১২০০০/- (বারো) হাজার টাকা আয় বৃদ্ধি পায়। যা দিয়ে অতিরিক্ত মূলধন বিনিয়োগ এবং সকল বৃদ্ধি পাওয়া খরচ চালানো একেবারে দূরুহ ব্যাপার হয়ে পড়েছে। গত ৩১/০১/২০২২ তারিখ সকল বিভাগীয় প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় তেল উত্তোলন, বিপণন ও পরিবহন বন্ধ রেখে কঠোর কর্মবিরতি পালনের মত কর্মসূচী ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। বর্তমান কোভিড-১৯ করোনার আবির্ভাবের কারণে আমরাও ব্যবসায়িরক দিক দিয়ে অনেক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছি। এছাড়া কোভিড-১৯ করোনার প্রভাব দিন দিন বেড়েই চলছে এবং দীর্ঘদিন এই সমস্যা থাকবে বলে মনে করছি। ইদানিং ফিলিং স্টেশনের উপর আরোপিত বিভিন্ন সংস্থার অমিমাংসিত লাইসেন্স গ্রহণের ব্যাপারে হয়রাণী শুরু হয়েছে। সঙ্গে বিপুল অংকের টাকা (অফিস খরচ হিসেবে) তারা দাবী করছে, যা আমাদের কমিশনের সীমিত আয় দিয়ে প্রদান করা সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, গত ০২-১২-২০১৯ইং তারিখ জ্বালানী উপদেষ্টা মহোদয়ের সঙ্গে বৈঠকে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য নেতৃবৃন্দসহ সাংবাদিক দের সম্মুখে ঘোষণা করা হয় যে, ১৫দফার দাবীর বাকী দাবীগুলোর অচিরেই একটা সুরাহা হবে। কিন্তু অত্যান্ত পরিতাপের বিষয়, আজ পর্যন্ত এই ন্যায়সংগত দাবীগুলোর কোনরূপ বাস্তবায়ন আমরা পাইনি। বিষয়টি প্রায় অমিমাংসিত অবস্থায় থেকে যায়। ইতিপূর্বে অত্র এসোসিয়েশনের গত ১৬-০৯-২০২০ইং তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত সদস্যগণ বিষয়টি নিয়ে বিষদভাবে আলোচনা করেন এবং এ ব্যাপারে ক্ষোভ ও দূঃখ প্রকাশ করেন। এর সমাধান কল্পে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট একটি লিখিত চিঠি প্রদান করা হয়। উক্ত চিঠি প্রদানের পর তার কোন সদোত্তর আমরা আজও পাইনি। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কাবুল, কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি এম. এ মোমিন দুলাল, সহ-সভাপতি আব্দুল আওয়াল জ্যেতি, সহ-সভাপতি মাহবুবুল আলম, যুগ্ম মহাসচিব শেখ ফরাদ হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য মোড়ল আব্দুস সোবহান, মোঃ মাসুদ পারভেজ, আনোয়ার হোসেন মেহেদী প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *